বজ্রপাতে একদিনে ২৩ জনের মৃত্যু, কৃষকদের সচেতন করলো এসএসটিএএফ

বজ্রপাতের মৌসুম মার্চ টু জুন। কেবল গত ২৮শে এপ্রিল এক দিনে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জনই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত কৃষক মারা গেছেন । শুক্রবার সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্ট্রোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম ঢাকার নবাবগঞ্জে মাঠে মাঠে ধান কাটা কৃষকদের নিয়ে বজ্রপাত সচেতনতামূলক এক বৈঠকে এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন। এ সময় সংগঠনটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও নাগরিক সমাজকে প্রতিবছর মে টু জুন কৃষকদের মাঝে সচেতনতা মূলক কর্মসূচি পালন, আহতদের বিনামূল্যে সবধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় মাঠে কাজ করা কৃষকদের তিন দফা নির্দেশনা পালন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এসএসটিএএফ । পাশাপাশি বজ্রপাত হলে কৃষকেরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন সেই কৌশলও বলে দিয়েছেন সংগঠনটির সদস্যরা।
কৃষকদের জন্য দেয়া নির্দেশনাগুলো হলো- আকাশে কালো মেঘ ও বৃষ্টি দেখা গেলে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ১. কোনো ভাবেই খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভেজা ও গাছের নিচে থাকা যাবে না।
২. ফসলের মাঠ, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা, জলাশয়ে থাকলে দ্রুত আশপাশের কোনো দালান কিংবা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। না পাওয়া গেলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন।
৩. বৃষ্টির সময় ছেলে-মেয়েদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে মাঠে মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকদের নিয়ে বজ্রপাত সচেতনামূলক কর্মসূচি পালন করেন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম ও সচেতন নাগরিক ফোরাম।
বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন ডা. মেসবাহ উদ্দিন। প্রধান বক্তার আলোচনায় তিনি কৃষকদের বলেন , খোলা আকাশে কাজ করার সময় জুতা পায়ে রাখতে হবে, বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে পড়তে হবে। তবে আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলে ও বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান করা বিপজ্জনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত মাঠে মাঠে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি বছরের মার্চ থেকে জুন এ চার মাস কৃষকদের মধ্যে বজ্রপাত সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করারও পরামর্শ দেন।
পরিসংখ্যান সংগঠনটির সভাপতি ড. কবিরুল বাশার উল্লেখ করেন , বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুইটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যেসব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদি পশু। ফলে মানুষ মারা যান, গবাদি পশুও মারা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে মনে করেন ওই সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ, আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্থাপনার নিচে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসএসটিএএফ’র যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, সাংবাদিক খালিদ হোসেন সুমন, বিপ্লব ঘোষ, সচেতন নাগরিক ফোরামের মুখপাত্র শিল্পী ইহসান আননূর, শেখ সাঈদ হোসাইন,মারুফ আহমেদ ভূইয়া,শাহাবুদ্দিন হোসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *